অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থর গতি

২০০০ সালের পর এক দশকে অস্ট্রেলিয়া তার সর্বনিম্ন বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাটিস্টিকস ব্যুরোর নতুন তথ্য থেকে দেখা যায় যে, জুনের প্রান্তিকে অর্থনীতি মাত্র ০.৫ শতাংশ বেড়েছে, আর সারা বছরে বেড়েছে ১.৪ শতাংশ। সরকারি খরচ এবং বাণিজ্যের কারণে কিছুটা প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ কমেছে।

How Australian state economies rank

Source: Getty Images

২০০৯ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দেখা দিলেও অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক অবস্থা মজবুত ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকেই অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে মন্থর গতি লক্ষ করা যায়।

তবে ট্রেজারার জশ ফ্রাইডেনবার্গ কিছু ডাটা নির্দেশ করে দাবি করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি বলেন, গত ২৮ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবৃদ্ধি ঘটে চলেছে যা অনেক উন্নত অর্থনীতিতেও দেখা যায় নি। 

তবে এটা ঠিক যে বৈশ্বিক অর্থনীতির কঠিন সময়েও অস্ট্রেলিয়ায় ট্রিপল-এ ক্রেডিট রেটিং বজায় থেকেছে। তাহলে কেন এই অর্থনৈতিক মন্দা ?

এ বিষয়ে এএনজেডের অর্থনীতিবিদ ফেলেসিটি এমমেট একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেন যে, পরিসংখ্যানগুলিতে দেখা যায় যে অর্থনীতিতে দুর্বলতা আরও ব্যাপক ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী ব্যয় এবং রফতানি কমেছে।

তিনি বলেন, এই প্রান্তিকে বেসরকারী খাতের সামগ্রিক চাহিদা ছিল নিম্নগামী, বিশেষ করে নির্মাণ শিল্প এবং ব্যবসায়ের বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে হাউসহোল্ড সেক্টরে বাড়ির দামও কমে গেছে।

বিরোধী দল লেবারের ট্রেজারী মুখপাত্র জিম চালমার্স এজন্য কোয়ালিশনের আর্থিক নীতিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ট্রেজারার যদি  এই দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো মনে করেন, তবে তো  আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে তিনি সবকিছু থেকে ধরাছোয়ার বাইরে চলে গেছেন। তিনি অর্থনীতিকে আবারও সচল করার জন্য সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে জোর দেন।

গ্রিনস নেতা রিচার্ড ডি নাটাল বলেন, লিবারেলরা দাবি করেন যে তারা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ভাল, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে চলেছে। জশ ফ্রাইডেনবার্গ তাদের পুরোনো সাফল্য নিয়ে একই বৃত্তে ঘুরছেন, তবে প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে  আমাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যদিও কয়লা, লৌহ আকরিক এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের রফতানি বাড়াতে মূলত প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু অর্থনীতির মূল নিয়ামক যেমন ব্যবসায়ের বিনিয়োগ, আবাসন নির্মাণ এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা- এ ব্যাপারগুলো সত্যিই থমকে আছে। 

ডেলোয়েট অ্যাকসেস ইকোনমিকসের ক্রিস রিচার্ডসন বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের চেয়ে দেশীয় ইস্যুগুলি প্রবৃদ্ধির বাড়া-কমার জন্য বেশি দায়ী।

তিনি বলেন, "বাড়ির দাম কমে অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতির দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে, যার অর্থ আমরা কেনাকাটা করতে গেলে সাবধানী হচ্ছি, আমরা অনেক নতুন বাড়ি তৈরি করছি না, তাছাড়া দেশের অনেক জায়গাই খরাপীড়িত - যা সংবাদপৃষ্ঠাগুলিতে স্থান পাচ্ছে না;  কিন্তু এটি খারাপ এবং এটি অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।"

ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবিসি নিউজকে বলেন, যে পরিসংখ্যান আমরা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে এক বছর পিছিয়ে গেছি। তিনি  অবশ্য বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধিও এটার কারণ হতে পারে। 

তিনি বলেন, অর্থনীতির মূল সমস্যা হলো মজুরি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং এটাই ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলছে বেশি। আর তাই ভোক্তা যখন ক্রয়ের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হয়, বিনিয়োগের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোও  আরও সতর্ক হয়ে যায়।

তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন যে, এই পরিসংখ্যানে সরকারের নেয়া ইনকাম ট্যাক্স-কাট এবং সুদের হার হ্রাসের যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা তা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়নি। তাই সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে প্রকৃত চিত্রটি দেখা যাবে বলে তার সরকার প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, "আমরা বছরের শেষার্ধে যাওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আপনারা ভুলে যাবেন না যে জার্মান এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিরও কোন কোন প্রান্তিকে  নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছিলো, তার মানে এই না তাদের অর্থনীতি দুর্বল বা তারা অযোগ্য ছিল। এবং আমি বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতি বাড়তে থাকবে এবং তা বাড়বে কারণ আমরা বিনিয়োগ করছি।"

তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সুদের হার হ্রাসের এবং সাম্প্রতিক ট্যাক্স কাটের প্রভাবে ভোক্তারা আবার কেনাকাটা বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে ট্যাক্স-কাটের ৮ বিলিয়ন ডলার সরাসরি অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির সত্যিই কি হাল দাঁড়াবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রান্তিক পর্যন্ত।  


Share

Published

Updated

By Shahan Alam
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand