কোভিড-১৯ সঙ্কটে কর্ম-সংস্থানে বেশি বাধা পাচ্ছে অস্থায়ী অভিবাসীরা

Busy call centre Credit: Getty Images/GCShutter

Busy call centre Credit: Getty Images/GCShutter Source: Getty Images/GCShutter

রিজার্ভ ব্যাংক অফ অস্ট্রেলিয়া ধারণা করছে এ বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্বের হার ১০ শতাংশে পৌঁছুবে। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সঙ্কটে শুধু স্থানীয়রাই নয়, অস্থায়ী অভিবাসীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহু অস্থায়ী অভিবাসীর জন্য কর্ম-সংস্থান করাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্থায়ী অভিবাসীদের কর্ম-সংস্থানে বাধা নিয়ে প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও ক্লিপটির লিংকটিতে ক্লিক করুন।


অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাগুলো ও কর্ম সন্ধানকারীরা যে সমস্যায় পড়েছেন সে সম্পর্কে খুব কম লোকই আগেভাগে ভাবতে পেরেছিলেন।
অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়কে ফেডারাল ট্রেজারার ‘শতাব্দিতে একবার ঘটা শক বা ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভিস-অস্ট্রেলিয়ার ডাইরেক্টর ও সলিসিটর নিক হাউস্টোন এর মতে, অস্থায়ী ভিসাধারীরা একটি অনিশ্চিত শ্রমবাজারের শিকার হয়েছেন। কোভিড-১৯ এরআগে যখন তারা অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরিকল্পনা করছিল তখন এই শ্রমবাজার ভিন্ন রকম ছিল।
অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে উৎসাহিত করেন হাউস্টোন। তারা যেন কাজের জন্য আবেদন করার সময়ে তাদের ভিসা স্ট্যাটাস ও কাজের অধিকারের কথা লিখে।

গ্লোবাল রিক্রুটমেন্ট ফার্ম হেইস (Hays) এর রিজিওনাল ডাইরেক্টর ডেভিড কোলি (Cawley) এতে একমত হন যে, কাজে-আবেদনকারীদের কাছ থেকে তাদের কাজের অধিকার সম্পর্কে নিয়োগদাতাদের পরিষ্কারভাবে জানতে হবে।

ভারতে জন্ম-নেওয়া ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার পলভিন ম্যাথিউ বলেন, অস্ট্রেলিয়ান অভিজ্ঞতা না থাকাটা সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে তিনি দেখতে পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান এক নারীকে বিয়ে করার জন্য কুয়েতে ডিসেম্বরে কাজ ছেড়ে দেন তিনি। মার্চ মাসে তিনি কাজের অনুমতি পান। আর, সীমান্ত বন্ধ হওয়ার সামান্য আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেন।এখানে এসে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম সংস্কৃতির মুখোমুখি হন। এখানকার উচ্চারণ, কৌতুক এবং যোগাযোগের স্টাইল, সবই ভিন্ন রকম।

ভিক্টোরিয়া-ভিত্তিক সেটেলমেন্ট এজেন্সি এএমইএস (AMES) অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, অস্থায়ী অভিবাসীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় আজকাল কল করছে এবং কর্ম-সংস্থানের জন্য সহযোগিতা চাচ্ছে।

মিডিয়া ম্যানেজার লরি নোয়েল বলেন, বহু অস্থায়ী অভিবাসী তাদের বিল পরিশোধ করছে খাবার ডেলিভারি করা কিংবা হসপিটালিটি খাতে কাজ করার মাধ্যমে। এগুলো এখনও খোলা রয়েছে।

নোয়েল স্বীকার করেন যে, নবাগতদের জন্য এটি একটি কঠিন শ্রমবাজার। তবে, কাজ পাওয়ার জন্য তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও জোরালো পরামর্শ দেন তিনি।

হেইস এর রিজিওনাল ডাইরেক্টর ডেভিড কোলি বলেন, কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগাযোগ-দক্ষতা অপরিহার্য।
কোলি বলেন, আদর্শ কর্মী তারা, যারা এই নতুন কোভিড-১৯ কাজের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। ”

এএমইএস (AMES) ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ক্লায়েন্ট ম্যানেজার মেন্ডি র‌্যাটক্লিফ বলেন, আগ্রহী কর্মীদের জন্য এখনও কাজের সুযোগ রয়েছে।

জুন মাসে ১১০০ নিয়োগদাতার উপরে একটি জরিপ চালায় হেইস। এতে দেখা যায়, প্রতি পাঁচ জনে প্রায় এক জন নিয়োগদাতার বর্তমানে নিয়োগ বন্ধ আছে। আর, তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি নিয়োগদাতা এখনও নিয়োগ দিচ্ছে।

হেলথ কেয়ার, এজড কেয়ার, প্রকিউরমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ, অনলাইন মার্কেটিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, আইটি, সাপ্লাই অ্যান্ড লজিস্টিক্স, ব্যাংকিং, ক্লিনিং ও মাইনিং খাতে কাজের চাহিদা দেখতে পাচ্ছেন কোলি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে বিদেশী কিছু কল সেন্টার কাজ করতে পারছে না। সেজন্য অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসাগুলো এই সময়টিতে অনশোর কল সেন্টার স্থাপন করার মাধ্যমে এই শূন্যস্থান পূরণ করছে। ফলে অস্ট্রেলিয়ায় এই খাতে স্বল্প-মেয়াদী কর্মীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় কাজ পাওয়ার জন্য আইটি পেশাজীবিদের সবসময় স্থানীয় অভিজ্ঞতার দরকার হয় না। অন্যদের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণের জন্য কর্ম-সন্ধানকারীদেরকে উৎসাহিত করেন র‌্যাটক্লিফ।

অ্যাডিলেইডের একটি ফার্ম থেকে প্রথমে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন ম্যাথিউ। কিন্তু, সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে বলা হয়, কোম্পানিটি এখন তার পরিবর্তে স্থানীয় কর্মী নিয়োগ দিতে চায়। তখন থেকে ম্যাথিউ ফুল টাইম জবসিকারে পরিণত হয়েছে। স্পেশাল আইসোলেশনের ফলে এখন ঘরে অবস্থান করলেও ম্যাথিউ লিঙ্কড-ইনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কিং চালিয়ে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার কাজের সংস্কৃতি তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন।

অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক একদল ইঞ্জিনিয়ার পরস্পরের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছেন। এদের বেশিরভাগই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। করোনাভাইরাসের কারণে তাদের মধ্যে অনেকেই কর্মহীন হয়ে গেছেন এবং কাজ খুঁজছেন।

ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালদের কাছ থেকে যে সহায়তা ও পরামর্শ পেয়েছেন ম্যাথিউ, সেগুলোর মাধ্যমে তিনি তার প্রথম দু’টি চাকরির সাক্ষাৎকারের সুযোগ পান। এর আগে কয়েক ডজন দরখাস্ত করেও ডাক পান নি তিনি।

এ বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্বের হার ১০ শতাংশে উপনীত হতে পারে বলে মনে করছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ অস্ট্রেলিয়া। এতে অনেকেই শঙ্কিত হলেও হাউস্টোন মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী অস্থায়ী ভিসাধারীরা বিদেশে অবস্থানকারীদের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে।

কোলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা থাকলেও, এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে কিছু নতুন সুযোগ-সুবিধাও তৈরি হয়েছে।

আপনি যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন এবং আপনার যদি আবেগ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে বিয়ন্ড ব্লু-এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ফোন করুন 1300 22 4636 নম্বরে। কিংবা লাইফলাইন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন, কল করুন 13 11 14 নম্বরে।

আপনার যদি তাৎক্ষণিকভাবে টেলিফোনে দোভাষির প্রয়োজন হয়, তাহলে কল করুন ন্যাশনাল ট্রান্সলেটিং অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটিং সার্ভিস-এ, 13 14 50 নম্বরে।


Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand