কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে মারা গেছেন

Pele

Brazil football legend Pele dies at 82 (File Image). Source: AAP / AAP

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের রাজা পেলে আজ ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি রেকর্ড তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন এবং গত শতাব্দীর অন্যতম প্রতাপশালী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। তার খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে একটি প্রতিবেদন।


ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত পেলে প্রায় দুই দশক ধরে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস এবং ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন। একজন দুর্দান্ত স্কোরার হিসেবে ভক্তদের এবং প্রতিপক্ষকেও মুগ্ধ করেছিলেন।

তার গৌরব, খেলোয়াড়ি দক্ষতা অন্যান্য খেলোয়াড় এবং ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করত।

তিনি তার দ্রুতলয়ের শৈলীতে খেলাধুলায় বিপ্লব ঘটিয়েছিল - এটি যেন ছিল সাম্বা নাচের তরঙ্গ যা মাঠে তার দেশের গৌরবকেই প্রকাশ করে।

তিনি ব্রাজিলীয় ফুটবলকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং খেলাধুলার জন্য বিশ্ব দূত হয়েছিলেন। অথচ তার শুরুটি ছিল সাও পাওলোর রাস্তায়, যেখানে তিনি খবরের কাগজ বা ন্যাকড়া দিয়ে ভরা একটি মোজাতে কিক করতেন।

পেলে তার খেলার শৈলী সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমার ফুটবল খেলা ঈশ্বরের কাছ থেকে উপহার। আমি সবসময় মানুষের জন্য, জনতার জন্য আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।"

ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সম্পর্কে যখন কথা বলা হয় তখন পেলের পাশাপাশি শুধুমাত্র প্রয়াত ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কথা উল্লেখ করা হয়।
Obit: Pele
Brazilian Soccer legend Pele (yellow shirt) attends the announcement of Subway's latest addition to their famous fan roster at Chelsea Piers Field House in New York, NY, on July 31, 2013. Credit: Anthony Behar/Sipa USA
কিন্তু ডেভিড ট্রাইহর্ন, যিনি পেলেকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন, তিনি চ্যানেল ফোর নিউজকে বলেছেন যে এই ধরনের তুলনা আসলে অর্থহীন।

এডসন আরন্তেস ডো নাসিমেন্তো ১৯৪০ সালের অক্টোবরে ট্রেস কোরাকোয়েসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি সবার কাছে কেবল 'পেলে' নামে পরিচিত পান। তিনি শুরুতে তরুণ বয়সে সাও পাওলোর বড় ক্লাবগুলো থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।

তিনি ১৯৫৬ সালে ১৫ বছর বয়সে সান্তোসে যোগ দেন এবং ১৭ বছর বয়সে সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন।

সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিক দেশের বিপক্ষে ব্রাজিলের ৫-২ ব্যবধানে জয়ে তার দুটি গোল ছিল, তার এই সাফল্যে তাকে সতীর্থরা কাঁধে নিয়ে মাঠের বাইরে নিয়ে যায়।

পেলে ছিলেন তার দেশের জন্য ১৯৭০ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ জয়ের প্রতীক।

তিনি ফাইনালে গোল করেন এবং ইতালির বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে একটি অপ্রত্যাশিত পাস দিয়ে কার্লোস আলবার্তোকে দিয়ে শেষ গোল করিয়েছিলেন।

উজ্জ্বল হলুদ ব্রাজিলের জার্সিতে পেলের ছবি ফুটবল ভক্তদের কাছে জীবন্ত রয়ে যায়, যেখানে তার ট্রেডমার্ক গোল উদযাপনের ছবিতে থাকে মাথার উপরে ডান মুষ্টির জোরে একটি লাফ দেয়া অবস্থার, যার পিছনে ১০ নম্বর স্ট্যাম্প লাগানো থাকে।

ফাইনালে স্বাগতিক দেশের বিপক্ষে ৫-২ ব্যবধানে জয়ের পর ব্রাজিল সরকার তাকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে, সেই ম্যাচে তার দুটি গোল ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের সূচনা করে। আর সেখান থেকেই তার খ্যাতি বাড়তে থাকে।

২০০৬ সালে এসবিএস-এর লেস মারের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে তিনি তার জন্মস্থান সম্পর্কে একটি গল্প বলেছিলেন এবং ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কেন তিনি তার জীবনে এতগুলো স্বাস্থ্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

২০০০ সালের ডিসেম্বরে ফিফা জুরি পেলেকে 'শতকের সেরা খেলোয়াড়' হিসেবে মর্যাদা দেয়।

তার তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি খেলার প্রচারে তার অনবদ্য জীবনযাপন এবং দূতের ভূমিকার কারণে এই মর্যাদা বলে মনে করা হয়।

তিনি যেভাবে মাদক ও অ্যালকোহলের ক্ষতি এড়াতে পেরেছিলেন তার জন্য তিনি গর্বিত ছিলেন।

পেলের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচটি ছিল নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে ১৯৭৭ সালে তার হোম ক্লাব সান্তোসের বিপক্ষে।

অতিথি তালিকায় বক্সিং গ্রেট মোহাম্মদ আলী এবং আমেরিকান রাজনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

অবশেষে বুট ঝুলিয়ে তিনি তার দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের সমাপ্তি টানেন।
ফুটবল খেলা থেকে বিদায় নেবার পর পেলে তার খ্যাতিকে বিশ্বশান্তি, আন্তর্জাতিক শিশুদের অধিকার এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজে লাগিয়েছিলেন।

১৯৯৪ সালে তিনি ইউনেস্কোর গুডউইল অ্যাম্বাসাডর নিযুক্ত হন এবং ২০১২ সালে তিনি একই সংস্থার 'চিলড্রেন ইন নিড' পুরস্কারে ভূষিত হন।

এর চার বছর আগে, পেলে তার নামে ফাউন্ডেশন চালু করেছিলেন, যা শিশুদের ক্ষমতায়নের জন্য নিবেদিত একটি দাতব্য সংস্থা।
Pele Neymar
From Left: Lionel Messi, Pele and Neymar at the 2012 B'allon Dor Source: Getty / Getty Images
এটি শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর বিশ্বে তার সবচেয়ে বড় অবদান হয়ে ওঠে, তবে এটি কেবল ফুটবলের সাথে তার বিস্ময়কর দক্ষতার কারণেই সম্ভব হয়েছিল।

ডেভিড ট্রাইহর্ন বলেন যে তিনি (পেলে) সবসময়ই একজন ব্রাজিলিয়ান হিসেবে গর্বিত ছিলেন।

ফ্লাভিও অগাস্টো নামে ব্রাজিলিয়ান এক ভক্ত কাতারে ফিফা বিশ্বকাপের সময় সেই ভালবাসার প্রতিদানে বলেন, "পেলে আমাদের শিকড়। আমরা আজ যা পেয়েছি তার জন্যই, তাকে ধন্যবাদ।"

জানামতে পেলে সাত সন্তানের জনক ছিলেন এবং তিনি তিনবার বিয়ে করেন।

তবে তার নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার সাথে অনেকের সম্পর্কের কারণে তার সন্তানদের প্রকৃত সংখ্যা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মাঠে তার এত অর্জন সত্ত্বেও, পেলে দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগেছেন। ১৯৭৭ সালে তার একটি কিডনি অপসারণ করা হয়েছিল।

২০১২ সালে তার হিপ প্রতিস্থাপন করা হয় এবং একসময় বিষণ্নতায় ভূগেছেন।

২০২১ সালে মূত্রনালীর সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন, একটি তখন টিউমার পাওয়া যায় এবং তা অপসারণ করা হয়।

শেষ পর্যন্ত অসুস্থতার সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার আগে কেমোথেরাপি নেওয়ার জন্য তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

পেলের জীবনাবসান ঘটে ৮২ বছর বয়সে।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার  সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: এসবিএস বাংলা

আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand